Uncategorized

আল্লাহর সাহায্য কেন আসে না?

আর আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর, এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ করো না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি ও

প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন। (সুরা আনফাল, আয়াত ৪৬) মুসলমানরা যদি

মিলেমিশে থাকে, আল্লাহ ও রাসুলের কথামতো এক ঝাণ্ডার নীচে থাকে, তাহলে এত বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে যে দুশমনেরা ভয়ে তাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোরও হিম্মত করবে না। তখন মুসলমানদের বেশিরভাগ কাজই স্রেফ প্রভাব-প্রতিপত্তির মাধ্যমেই হাসিল হয়ে যাবে। অন্যদিকে তারা যদি ঐক্য ভুলে দ্বন্দ্ব-ফাসাদে লিপ্ত হয়, অন্যদের চোখে তাদের মূল্যই থাকবে না। দুশমনরা তাদের ওপর প্রভাব-প্রতিপত্তি

খাটাতে কসুর করবে না। ঐক্যের জন্য যে-জিনিসের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো সবর বা ধৈর্য। কেননা যখনই অনেক মানুষ এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াবে তখন নানাবিধ সমস্যা-সঙ্কট দেখা দিতে শুরু করবে। একে অপরের দ্বারা কষ্ট পাবে। একজনের সমালোচনা অন্যজনের রাগ উস্কে দেবে। একজনের উন্নতি অন্যজনের চোখ ও মনের জ্বালার কারণ হবে। লেনদেনের স্বার্থের জলাঞ্জলি দিতে হতে পারে। কেউ আশা পূরণ

করতে ব্যর্থ হবে, কেউ আশাহত হয়ে মূঢ় হয়ে যাবে। এমন অনেক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, যা এড়ানো যাবে না। এমন সব পরিস্থিতির উদ্ভুত হওয়া তো আটকানো যাবে না। কিন্তু আমরা যা করতে পারি তা হলো, নিজেদের কষ্ট ভুলে যাব, আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা ভেবে দুঃখ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করব। ভিন্নমতকে মেনে নেওয়ার ভিত্তিতেই কেবল বিভেদের দেয়াল ভেঙে একমত হওয়া সম্ভব, ভিন্নমতকে দমন-পীড়ন করে তা সম্ভব নয়। যে লোক মত বৈভিন্নতার মসিবত ও কষ্ট সহ্য করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে, সেই পারে ঐক্যের সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণ করতে। জীবনে

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফল হওয়ার চাবিকাঠি যেমন ধৈর্য; তেমনই ঐক্যও। আসলে ঐক্য বলা যায় অনৈক্য এড়িয়ে একতাবদ্ধ থাকাকে। অনৈক্য সহ্য করার মানসিক শক্তি ও স্থৈর্য না থাকলে ঐক্য প্রতিষ্ঠা স্বপ্নমাত্র। আজ আমাদের মসজিদগুলো কানায় কানায় পূর্ণ। সব জায়গায় মুসলমানরা এবাদত-বন্দেগি করছে, তারপরেও মুসলমানরা কেন অপদস্থ? কেন মুসলমানদের ওপর আল্লাহর সাহায্য আসে না? এত অসংখ্য মানুষ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখে, তবু কেন আল্লাহ তাদের দিকে ফিরে তাকায় না? এর কারণ একটাই : মুসলমানদের পারস্পরিক অনৈক্য। আল্লাহর সঙ্গে

মিলিত হওয়ার জন্য সবাই মসজিদপানে দৌড়োচ্ছে। কিন্তু বান্দার সঙ্গে সম্পর্ক জোড়ার প্রশ্নে সবাই নীরব, স্থবির; প্রস্তুত নয় কেউই। সবাই ব্যক্তিগত এবাদতে সচেষ্ট। কিন্তু সম্মিলিত এবাদত, যার অপর নাম ইত্তেহাদ (ঐক্য), তার দিকে তারা ভ্রুক্ষেপও নাই। কারো কাছেই এর গুরুত্ব নাই। মুসলমানদের আলাদা আলাদাভাবে মর্যাদার জীবনপ্রাপ্তি সম্ভব নয়। মর্যাদার জীবন কেবল একতাবদ্ধ হলেই মিলতে পারে। মর্যাদার জীবন পেতে হলে চাই আল্লাহর কাছ সম্মিলিত সাহায্য। আর ঐশী নিয়ম হচ্ছে, সম্মিলিত সাহায্য আল্লাহ তায়ালা সর্বদা সম্মিলিত আমলের ভিত্তিতেই

দেন। ব্যক্তিগত আমলের বিনিময়ে সম্মিলিত সাহায্য পাওয়া যায় না। মানুষ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মসজিদ থেকে বেরোয় যেন বান্দার সঙ্গেও তার মোলাকাত ঘটে। কিন্তু তারা বান্দার সঙ্গে মোলাকাত রাজি না। আল্লাহর সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আকাঙ্ক্ষী কিন্তু বান্দার সঙ্গে একাত্ম প্রস্তুত নয়। এর ফলে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সে একা। কোটি কোটি মুসলমান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক করে রেখেছে, কিন্তু মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে মিলেমিশে যে ঐক্যবদ্ধ উম্মাহর গঠন করবে— এই ক্ষেত্রে তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের

দাবিই হলো আল্লাহর বান্দার সঙ্গেও সম্পর্ক রাখা। আল্লাহ সঙ্গে সম্পর্ক রাখা পরও যখন মানুষ বান্দার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না, একতাবদ্ধ হয় না, তখন আল্লাহর গজব নাজিল হয়। আল্লাহর সাহায্য উঠে যায়। যখন দেখা যাবে দৃশ্যত আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ব্যক্তিরও বান্দার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নেই, তখন এ কথাই প্রমাণ হয় যে, আল্লাহর সঙ্গেও তার সম্পর্ক নেই। এই লোকটি একের পর এবাদত করে চলেছে। কিন্তু ইবাদতের হাকিকত সম্পর্কে সে বেখবর। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক কায়েম হলে মানুষ বিনয়ী হয়ে ওঠে। বিনয়ী বান্দারা মসজিদ থেকে বের হয়ে

অন্যের সঙ্গে অহংকারীসুলভ ও ঔদ্ধত্যমূলক আচরণ করে না। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ককারী বান্দা সবসময় বিচার দিবসের কথা স্মরণ করে, এরকম ব্যক্তির জন্য সম্ভব নয় জাগতিক কায়-কারবারে অন্যের সাথে দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্ক রাখা। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক কায়েমের ফলে মানুষের মধ্যে আল্লাহওয়ালা বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়। এমন বৈশিষ্ট্যে মণ্ডিত মানুষ কীভাবে অন্যের সঙ্গে দয়ার্দ্র আচরণ ভুলে থাকতে? অথচ দয়ার্দ্রতাই আল্লাহর সবচেয়ে বড়ো গুণ। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক কায়েমের ফলে বান্দার মধ্যে যাবতীয় মঙ্গল ও কল্যাণের সমন্বয় ঘটে। যার মধ্যে মঙ্গল ও কল্যাণের

সমন্বয় ঘটে তার দ্বারা মানুষ অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় না। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বান্দাকে রোজ হাশরের কথা মনে করিয়ে দেয়, যেদিন ভালো-মন্দ প্রত্যেকটি কাজের হিসাব নেওয়া হবে। বিচার দিবসের ভয় তার মধ্যে ন্যায়নিষ্ঠতার বোধ তৈরি করে। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের অর্থ হলো বান্দা সবসময় অন্যায় ও অপরাধ থেকে বেঁচে থাকবে, অতীতের অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এমন ব্যক্তি কীভাবে অন্যের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট করে নতুন করে অন্যায়কারী হবে? আলো আর অন্ধকার কখনো একত্রে থাকতে পারে না, ফুলের সংস্পর্শে থাকা

ব্যক্তি কখনো দুর্গন্ধ ছড়ায় না, একইভাবে ঈমানদার ব্যক্তি কখনো খোদাদ্রোহীর মতো আচরণ করতে পারে না। ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সংশ্রবে দিবারাত্রী অতিবাহিত করে। তো যেই ব্যক্তি আল্লাহ ও ফেরেশতাদের পড়শী, তিনি কীভাবে জুলুম ও পরশ্রীকাতরতার দোষ প্রকাশ করতে পারেন? যার আচার-আচরণে জুলুম ও পরশ্রীকাতরতার দোষ আছে, তার দ্বারাই কেবল বিভেদ তৈরির ঘটনা ঘটতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যখন পরিপূর্ণভাবে মানুষের হাসিল হয়ে যায়, তখন তার ভেতর থেকে ওইসব খারাপ স্বভাব ও বৈশিষ্ট দূর হয়ে যায়, যা মানুষকে মানুষের থেকে দূরে ঠেলে দেয়। তখন আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক কায়েম হলে অবধারিতভাবে বান্দার সঙ্গেও সম্পর্ক কায়েম হয়ে যায়। আর যখন

বান্দাদের মাঝে পারস্পরিক হার্দিক সম্পর্ক বজায় থাকবে, আল্লাহ এত বেশি খুশি হবেন যে, প্রতি সকালের জন্য নির্ধারিত (রহমতের) বারিধারা সন্ধ্যায়ই বর্ষণ করা শুরু করবেন। বান্দাকে নেয়ামতের চাদরে মুড়ে দিতে তিনি বিলম্ব করবেন না। একটি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি হলো ঐক্য। আল্লাহর কাছেও সবচেয়ে প্রিয় এই ঐক্য জিনিশটা। ঐক্য যেমন দুনিয়ায় বান্দাকে সম্মানী বানায়, আখেরাতেও তেমনই সম্মানী বানায়।

Related Articles

Back to top button