শিশু ইয়াসিনের গলা কেটে নিজেই মাইকিং-তল্লাশি করেন খালু সিরাজুল






বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকার ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকদের





ফাঁসাতে ৯ বছরের শিশু ইয়াসিনকে গলা কেটে হত্যা করেছেন খালু





সিরাজুল ইসলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার পর নিজেই এলাকায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি মাইকিং করেন। এছাড়া ইয়াসিনের লাশ উদ্ধারের সময়ও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন তিনি। অবশেষে শেষ হলো সব নাটকীয়তা। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে হত্যার আসল রহস্য। ফাঁস হয়ে গেছে সিরাজুলের গোমর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আজিমুল করিম। তিনি জানান, ইয়াসিন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে। জানা গেছে, ৮ মাস আগে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডের সোহরাফ খান হাউজিং এলাকার দিনমজুর জাকির সর্দারের মেয়ে ইতি আক্তারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সিরাজুল ইসলামের ছেলে আল আমিনের।





বিভিন্ন কারনে ইতি আক্তার ও আমিনের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। বিয়ের অল্প সময়ের মধ্যে ৪-৫ বার পারিবারিক সালিশ বৈঠকও হয়েছে। ইতি আক্তার জানান, যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় মারধর করত আল-আমিন। স্থানীয় ছত্তার ফকির নামে একজন কবিরারের কাছ থেকে নিয়মিত ঝাড়ফুঁক করাতেন শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম। কয়েক দিন আগেও আল-আমিন তাকে মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে বিয়ের মধ্যস্থতাকারী স্বপন মোল্লার মাধ্যমে সর্বশেষ সালিশ করে বাবার বাসায় চলে আসেন। ইতি বলেন, কবিরাজ নাকি বলেছেন, আমাকে বিয়ের আগে আল-আমিন যেখানে হাত দিত সেখানে সোনা ফলত। অনেক আয়-রোজগার ছিল। আমাকে বিয়ে করার পরই রাশি বায়ে টেনেছে। এজন্য আমার স্বামী এসে আমাকে মারধর করতেন। শেষে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আল আমিনের সংসারে আর থাকব না। তদন্তে উঠে এসেছে, সিরাজুল ইসলাম ও তার ছেলে আল আমিনের কয়েকটি মামলা করেছেন ইতি আক্তারের বাবা জাকির সর্দার। সেই মামলা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজচ্ছিলেন সিরাজুল। এজন্য পাল্টা মামলা দিয়ে জাকির সর্দারকে চাপে রাখার চেষ্টায় ভায়রার ছেলে ইয়াছিনকে গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। সূত্র জানায়, গত সোমবার বরগুনার বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ছগির হোসেনের ছেলে ইয়াছিন তার দাদি শিরিন বেগমের সঙ্গে রূপাতলীতে সিরাজুল ইসলামের বাসায় বেড়াতে আসেন। ইয়াছিনের মা বিদেশে থাকেন। এ কারণে তাকে ডিভোর্স দিয়ে মনোয়ারা বেগমকে বিয়ে করেন ছগির। তিনি রাজধানীর মহাখালীতে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালান। আর ইয়াছিন তার দাদির সঙ্গে বরগুনায় থাকে। মাঝে মাঝে ঢাকায় বাবার কাছে থাকত। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইয়াছিন বাসায় আসার পরই সিরাজুল তাকে হত্যা করে ছেলের শ্বশুরের ওপর দায় চাপানোর পরিকল্পনা করেন। এমনকি বাদী হয়ে মামলাও করতে চেয়েছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে ‘লাকড়ি টোকানো’র কথা বলে বসুন্ধরা হাউজিংয়ের মধ্যে বরিশাল রেডিও সেন্টারের দেয়াল সংলগ্ন একটি নির্জন স্থানে শিশু ইয়াছিনকে নিয়ে যান সিরাজুল। তাকে পরিত্যক্ত টয়লেটের স্লাবের উপর শুইয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। পরে দিনভর বৃষ্টিতে রক্ত ও পায়ের চিহ্ন মুছে যায়। এদিকে ইয়াছিনকে হত্যা করে বাসায় ফিরে যান সিরাজুল। ঐদিন বিকেলেই ইয়াছিনের সন্ধানে নিজেই মাইকিং করান। রাতে কয়েক দফা হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে ঘুরে আসেন। শনিবার সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন লাশ দেখতে পেলে সিরাজুলও ঘটনাস্থলে যান। তিনি হত্যার দায় ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোকদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন। সিরাজুল দাবি করেন- তার ছেলে আল আমিনের শ্বশুর জাকির সর্দার, শ্যালক নাজমুল, রাসেল, কামাল এবং ইব্রাহিম হত্যার সঙ্গে জড়িত। একই দাবি করেন আল আমিন ও তার মা আলেয়া বেগম। তবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেলে হত্যার দায় স্বীকার করেন সিরাজুল ইসলাম। ইয়াছিনের সৎ মা মনোয়ারা বেগম বলেন, বরিশালে আমার ছেলের বা আমাদের সঙ্গে কারো শত্রুতা ছিল না। সে বেড়াতে এসেছিল। আত্মীয়র বাড়িতে এসে খুন হয়ে গেল। আমি খুনির ফাঁসি চাই। নিহতের বাবা ছগির হোসেন বলেন, গতকাল সিরাজুল আমাকে ফোন করে জানায় ইয়াছিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বরিশাল এসে দেখছি সন্তানের লাশ। আমরা খুনির বিচার চাই। উল্লেখ্য, শনিবার সকালে বরিশাল নগরীর রূপাতলীর বসুন্ধরা হাউজিং এলাকা থেকে ৯ বছর বয়সী শিশু ইয়াছিনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।