আলোচিত খবর

চাকরি পাচ্ছেন না, শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চান আলমগীর!

বাংলাদেশের সব অভূতপূর্ব সৃষ্টিগুলোর জন্মই দেন তরুণরা। মুক্তিযুদ্ধ

পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনেও তরুণদের ছিল ইতিবাচক ভূমিকা। কিন্তু বর্তমান

তরুণ সমাজের বড় অংশই বেকার, অনিশ্চিত জীবনের পথে। যার কারণে অনেক

তরুণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথেও হাঁটেন। ‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’—এমন লেখা সংবলিত একটি পোস্টার দুই দিন হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছিল। বলা যায় পোস্টারটি ফেসবুকে একপ্রকার ভাইরাল হয়ে গেছে। টিউশনির জন্য এমন একটি পোস্টার লাগিয়েছেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মো. আলমগীর কবির। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। এখন লড়াই করে যাচ্ছেন চাকরির জন্য। জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। আলমগীর কবির তাঁর পোস্টারে লিখেছেন, ‘শুধুমাত্র দু-বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই।’ সকাল ও দুপুরের খাবারের বিনিময়ে তিনি পড়াবেন। এ ছাড়া তিনি লিখেছেন, প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত গণিত ব্যতীত সবকিছুই পড়াবেন। সেই পোস্টারে নিজের পেশা হিসেবে লিখেছেন ‘বেকার’। এতে তাঁর নাম ও মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। আলমগীর কবিরের সঙ্গে কথা হয়। নিজের পোস্টারটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনের তাগিদে

এই পোস্টার লাগিয়েছি। আমার বন্ধুদের অনেক দিন হলো টিউশনির কথা বলছি, কিন্তু তারা দিতে পারছে না। এর মধ্যে আমি একটা টিউশনি পাই। সেখানে দেড় হাজার টাকা বেতন দেয়। কিন্তু এই টাকা দিয়ে হয় না। আমার পরিবারের অবস্থাও ভালো না।’ কবির বলেন, ‘আমি চাচ্ছিলাম নিজে কিছু একটা করি। আমার এই টাকা দিয়ে হচ্ছে না। আমাকে মাঝেমধ্যেই ঢাকায় যেতে হয়, পরীক্ষা দিতে। আমার কিছু জমানো টাকা ছিল, যা দিয়ে বেশ কয়েকবার ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। এখন ধার-দেনা করে চলছি। অনেক ঋণের মধ্যে আছি আমি। গত মাসে একাধিকবার (বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার) ভাইভা দিতে ঢাকায় যেতে হয়েছে। অনেক টাকা খরচ হয়েছে।’ দুই বেলা ভাতের বিনিময়ে যিনি পড়াতে চান, সেই আলমগীর থাকেন কোথায়? মেসে? না, একটি বাসায়। আগে মেসে থাকতেন। কিন্তু চলতে কষ্ট হচ্ছিল। মেসে থাকা-খাওয়ার জন্য তো অনেক টাকা দরকার। তিনি তখন চাকরির কোচিং করতেন। তাঁর সঙ্গে একটি মেয়ে পড়তেন। তাঁদের বাসা তাঁর মেসের পাশেই ছিল। ওই মেয়ের পরিবার সেখানে বেশি থাকে না। এখানে সব ভাড়া দিয়ে তাঁরা ঢাকায় থাকেন। কবির সেই মেয়েকে তাঁদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। মেয়েটি তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলতে বলেন কবিরকে। তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বললে তিনি কবিরকে থাকার জায়গা দেন। সেখানেই এখন থাকেন তিনি। তাই মাথার ওপর একটা ছাদ থাকলেও তিন বেলা খাবারের সংস্থান নেই তাঁর। এ জন্যই তাঁর এই বিজ্ঞাপন। একটা চাকরির জন্য বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে টাকা জোগাড় করে আলমগীর কবির ছুটে বেড়ান এদিক-ওদিক। সরকারি চাকরির বয়স চলে গেছে করোনার শুরুর বছরই। ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন, যেমনটা করেন বাংলাদেশের আর দশটা শিক্ষিত তরুণ। কিন্তু সেই তরুণদের মধ্যে সফল গুটিকয়েকের একজন হতে পারেননি আলমগীর কবির, যেমন অধিকাংশই পারেন না। সোনার হরিণ সরকারি চাকরি তো আর সবার ভাগ্যে জোটে না। কেন জোটে না। শুধুই কি যোগ্যতার অভাব? আলমগীর কিছুটা বলেন, অনেকটাই বলেন না। শুধু ইঙ্গিতে বোঝান নিয়োগে আর্থিক লেনদেন, পরিচয়, লবিং ইত্যাদি নানা বিষয়ের কথা। কিন্তু বলেন না। শুধু বলেন, সরকারি চাকরি হলো না। বেসরকারি চাকরিই ভরসা এখন। কিন্তু সেখানেও।

Related Articles

Back to top button