দেশের-খবর

শিমুর লাশ গাড়িতে নিয়ে সারাদিন ঘুরেছিলেন দুই বন্ধু

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে গলাটিপে হত্যার পর লাশ গুম করার

জন্য মরিয়া হয়ে উঠে স্বামী খন্দকার শাখাওয়াত আলীম নোবেল।

নিজে থেকে কোন ধরনের বুদ্ধি না পেয়ে সহযোগীতার জন্য ডেকে আনেন বন্ধু

ল্যবন্ধু আব্দুল্লাহ ফরহাদকে। এরপর দুইজন মিলে লাশ গুমের পরিকল্পনা করতে থাকেন। দুজনের পরামর্শে লাশটি দুটি বস্তায় ভরে রাখা হয়, কিন্তু রুমে থেকে বের করতে না পেরে নিরাপত্তা কর্মীকে গেট থেকে সরাতে তাকে নাস্তা কিনতে পাঠিয়েছিলেন। ওই সুযোগে বস্তায় ভরা লাশটি দুই বন্ধু মিলে গাড়ির পেছনে তুলে ফেলেন। সেই বস্তায় শিমুর লাশ ভরে তা গাড়িতে তুলেন। এরপর রোববার দিনভরই লাশ ফেলতে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে থাকেন তারা। শেষ পর্যন্ত রোববার রাতে লাশ ভরা বস্তাটি কেরাণীগঞ্জের আলীপুর ব্রিজের পাশে ফেলতে পারেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন নোবেল ও ফরহাদ। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ এই দুইজনকে গ্রেপ্তার রিমান্ডে নিয়েছে। তারা কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। পুলিশ বলছে, বাসা থেকে লাশ বের করতেও নাটক করেছিলেন নোবেল ওই দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য তুলে

ধরে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবদুস ছালাম বলেন, ‌’শিমুর লাশ লম্বালম্বি করে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়। এরপর নোবেল তার ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে লাশের বস্তাটি রাখেন।’ ‘প্রথমে তারা গাড়িটি নিয়ে মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে লাশ ফেলার উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। তখনও শিমুর মরদেহ ভরা বস্তাটি গাড়িতেই ছিল। রোববার সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে বের হন’-বলছিলেন ওসি আবদুস সালাম। ফরহাদ পুলিশকে বলেছেন, সন্ধ্যার দিকে তারা গাড়িটি চালিয়ে মোহাম্মদপুরের দিকে যান। এরপর বছিলা ব্রিজ এলাকা ঘুরতে থাকেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আলীপুর ব্রিজের কাছে গিয়ে বস্তাটি ফেলে চলে আসেন। কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার ওসি বলেন, লাশ ফেলে দুইজনে ফিরে শিমুর সন্ধান চেয়ে আবার কলাবাগান থানায় জিডি করেন। এই জিডির বাদি হন নোবেল। তারা নিখুতভাবে কাজটি করে স্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। কিন্তু যে সুতা দিয়ে বস্তা সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতার বান্ডেল পাওয়া যায় গাড়িটিতে। এতে ধরা পড়েন ওই দুইজন। ‘লাশ ফেলে গাড়িটি ধোয়া হয়েছিল। এরপর তাতে ব্লিচিং পাউডার দেওয়া হয়। তাতে সন্দেহ আরও বাড়ে। যা হিসেব মেলাতে পুলিশের আরো সহজ হয়’ বলেন ওসি। রোববার সকালে শিমু গ্রীন রোডের বাসা থেকে বের হন বলে তার স্বামী দাবি করে আসছিলেন। তার ফোন বন্ধ থাকায় স্বজনেরা সন্ধান চালাতে থাকেন। এরপর কলাবাগান থানায় জিডিও করা হয়। তবে সোমবার সকালে পুলিশ আলীপুর ব্রিজের পাশ থেকে বস্তায় ভরা অজ্ঞাতপরিচয়ে লাশ উদ্ধার করে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারে আঙুলের ছাপ মিলিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ওই লাশটিই অভিনেত্রী শিমুর। এরপরই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে ওই অভিনেত্রীর মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শিমুর সহকর্মীরা বলছেন, ১৯৯৮ সালে কাজী হায়াতের ‘বর্তমান’ সিনেমার মধ্য দিয়ে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন পরিচালকের অন্তত ২৫টি চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন। পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় নিয়ে সরব ছিলেন। সর্বশেষ একটি বেসরকারি টিভিতে তার অভিনীত ‘ফ্যামেলি ক্রাইসিস’ ধারাবাহিক নাটকটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। অভিনয়ের পাশাপাশি কয়েক বছর আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত ছিলেন শিমু। পাশাপাশি নাটক নির্মানে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার।

Related Articles

Back to top button