বিয়ের ফাঁদ পেতে কয়েক যুবকের সাথে প্রতারণা, বনে গেলেন জনপ্রতিনিধিও






কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নে ভয়ঙ্কর এক প্রতারক পরিবারের





সন্ধান মিলেছে। মাদক ও যৌনতা যাদের প্রধান হাতিয়ার। এক সময় নুন





আনতে পান্তা ফুরাতো এই পরিবারের। ছিলো না কোনো আর্থিক স্বচ্ছলতাও। সেই পরিবারে এখন রয়েছে সংরক্ষিত এমইউপির মতো গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধির পদ, সুরম্য প্রাসাদ, ঝকঝকে বহুতল ভবন সহ নানা ধরণের বিলাসী উপকরণ। পিএমখালী ইউনিয়নের দক্ষিন নয়াপাড়া বাকঁখালী নদীর পাড়ে মরহুম সাহাব উদ্দীন (প্রকাশ কালা বদা) এর পরিবার জড়িত নেই এমন কোন অপরাধ বাকি নেই। জানা যায়, রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হবার পেছনে রয়েছে মাদক ও যৌনতা নির্ভর প্রতারণা। বিভিন্ন পদ্ধতিতে ফাঁদ পেতে কয়েকজন যুবক ও প্রবাসীর কাছ থেকে হাতিয়েছেন অর্ধ কোটি টাকা। কখনও বিয়ের আশ্বাস, কখনও বা জোর জবরদস্তি-মারধর; এভাবে করে





পুরো পরিবারের সদস্যরা লিপ্ত থাকে কোন না কোন অপকর্মে। আরও রয়েছে ইয়াবার মতো ভয়ঙ্কর মরণনেশা মাদক পাচারের মতো অপকর্মেও তার তিন ভাই জড়িত থাকার তথ্য। এবং তাদের বিশেষ সহযোগী একই এলাকার কথিত যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর। আদতে তাদের পরিবারের ইয়াবা ডন আবছারের হাতে সবসময় বন্দুক থাকে। সেই বন্দুকের ভয়ে সবাই ভয়ের উপর রাখে। ভুক্তভোগী যুবক সেলিমের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- পিএমখালীর ৫নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার লুৎফা তাহৃরা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা ডন আবছারের বড় বোন। তার ইশারাতেই লুৎফা তাহেরা চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলো। নির্বাচিতও হয়েছেন তিনি। তবে এর পেছনে রয়েছে তার মাদক ব্যবসায়ী ভাই আবছারের ২৫লক্ষ টাকার যোগান এবং এর আগে বিয়ের আশ্বাসে কয়েক যুবক থেকে হাতিয়ে নেওয়া কমপক্ষে ত্রিশ লক্ষ টাকার যোগান। সেলিম অভিযোগ করে জানান- লুৎফা এর আগেও আনোয়ার নামে প্রবাসী একজনের সাথে বিয়েতে বসেছিলো। কিন্তু ওই স্বামীর সংসার ভেঙে নগদ ১২ লক্ষ টাকা এবং ১৬ ভরি স্বর্ণ নিয়ে বাপের বাড়ি পালিয়ে যায়। এরপরে আনোয়ার বিচার চাইতে গেলে তাকে কক্সবাজার আদালত চত্বরে হামলা চালিয়ে বিবস্ত্র করে লাঞ্ছিত করে। বর্ণিত এঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন লুৎফার পূর্বের স্বামী আনোয়ার। আনোয়ার জানান- তিনি তখন প্রবাসে থাকতেন। তখন লুৎফা বাহিরে অন্য ছেলেদের সাথে পরকীয়া করে তার সমস্ত টাকা পয়সা অন্যত্রে স্থানান্তর করে ফেলে। এমনকি মেয়েটা তখন তাকে বিনা অপরাধে ১০/১৫ জন গুন্ডা লাগিয়ে দিয়ে জন সম্মুখে মারধর করে। যেনো আনোয়ার আর কোনো সময় সংসারের দাবীতে লুৎফার কাছে না যায় এমর্মেও হুমকি দেওয়া হয় তাকে। তিনি আরও জানান- মেয়েটা আমার সাথে শুধু প্রতারণাই করেনি আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ও সামাজিক মান মর্যাদাও ক্ষুন্ন করেছে। এখন এসব কথা মনে পড়লেই খুব কষ্ট অনুভব করি। আমার সংসারকে অবজ্ঞা করে লুৎফা যখন পালিয়ে গিয়েছিলো তখন সে আমার কাছ থেকে নগদ ১২লক্ষ টাকা এবং ১৬ ভরি স্বর্ণ নিয়ে গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়- লুৎফা তাহেরার ছোটো বোন রুনাও একই ভাবে মানিক নামে এক ছেলের সাথে প্রতারণা করে প্রায় ১৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। এটার সাথে জড়িত ছিলো লুৎফা ও রুনা সহ তাদের পুরা পরিবার। যোগাযোগ করে জানতে চাইলে আরেক ভুক্তভোগী একই এলাকার মানিক জানান- সদ্য নির্বাচিত লুৎফা মেম্বারের ছোটবোন রুনার সাথে তার সম্পর্ক ছিল। এক পর্যায়ে বিয়েও হয়। কিন্তু টাকার লোভে পড়ে রুনা পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে সাজু নামের এক মাদক ব্যবসায়ী যুবকের সাথে। সাজুর বাড়ি শহরের কলাতলী। সে অধিকাংশ সময় ব্যয় করে বাংলাবাজার। সম্পর্কের এক পর্যায়ে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে রুনা হঠাৎ করে ওই ছেলেকে বিয়ে করে ফেলে। লুৎফা মেম্বারের পরিবার আমাকে অর্থনৈতিকভাবে আঘাত করেছে। সে সাথে সামাজিকভাবে আমি হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। স্থানীয়দের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান- মূলত কলাতলীর মাদক ব্যবসায়ী সাজুর সাথে লুৎফা ও রুনা দুজনেরই সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু মাদক ব্যবসা ও টাকার লোভে পরস্পরের গোপনীয়তা ও নোংরামী একে অপরের কাছে কখনও গোপন করে যাচ্ছে অথবা কখনও কষ্ট হলেও মুখবুঝে সহ্য করে যাচ্ছে। মহিলা মেম্বার লুৎফার কাছে নির্যাতনের শিকার দাবী করে অভিযোগকারী চকরিয়ার সেলিম আরও জানান- লুৎফা যখন নির্বাচনে দাঁড়ায় তখন তার প্রচুর টাকার দরকার পড়েছিলো। এই টাকা জোগার করতে সে আমার সাথে বিয়ের নাটক করে। গত ৬নভেম্বর বিয়ে করে আর ২৫ নভেম্বর তালাক দিয়ে দেয়। মাঝখানে মাত্র ১৯ দিনের এই সংসারে সে আমার কাছ থেকে নগদ ২০লাখ টাকা নিয়ে নির্বাচন করেছে। জয়ীও হয়েছে। এরপরপরই সে শপথ নিয়ে পরদিন আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। এভাবে মানসিক ও আর্থিক নির্যাতনের সুরাহা চাইতে গেলে তার কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ভাই দিয়ে আমাকে নানা ধরণের হুমকি ধমকি সহ প্রাণ নাশের শঙ্কাও তৈরি করেছে। অনুসন্ধানে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে লুৎফা মেম্বারের ভাই আবছার দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। সে ইয়াবা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে একাধিক বার আটক হয়েছিল। এর সূত্র ধরে লুৎফা তার ভাইয়ের জামিনের কাজে দৌড়াতে গিয়ে সরকার দলীয় একজন এডভোকেটের সাথে পরিচিত হয়ে যায়। ওইখান থেকে ওই এডভোকেটকে এই প্রতারক পরিবার নিজেদের আত্মীয় স্বজন পরিচয় দিয়ে কথা বলে। যত্রতত্র ওই এডভোকেটের নাম ব্যবহার করে থাকে। স্থানীয় একটি পত্রিকার পৃষ্ঠপোষকতাও রয়েছে এই প্রতারক পরিবারের সাথে। অভিযোগের বিষয়ে সংরক্ষিত এমইউপি লুৎফার বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে তারা নিজেরাই অপরাধী। তাদের ঘটনাগুলো বললে আপনি লিখে শেষ করতে পারবেন না। পরে তিনি তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবেন বলে একদিন সময় নেন। কিন্তু যোগাযোগের তিনদিন অতিবাহিত হলেও অভিযোগের বিষয়ে তিনি তার অবস্থান পরিষ্কার করেননি। এ বিষয়ে সদ্য নির্বাচিত ৫নং ওয়ার্ড এমএইউপি সোহাগ জানান, ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। আপনারা যা জানেন আমরাও ততটুকুই জানি। লুৎফা যেহেতু এখন জনপ্রতিনিধির পদে আছেন সেহেতু আপনাদেরও উচিত লুৎফা ও তার পরিবারের মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে নিউজ করা। কিন্ত এভাবে বিয়ের নামে স্বামী বদল করে অর্থ লুটপাট ও হয়রাণির কারণ কি জানতে চাইলে তিনিও বিষয়টি নিয়ে বিব্রত বলে মন্তব্য করেন। এছাড়াও পিএমখালীর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ বলেন- লুৎফার পরিবার গরীব ছিলো এটা সত্য। কিন্তু সম্ভ্রান্ত ছিলো। মূলত সেলিম নামের ছেলেটা লুৎফার পরিবার তছনছ করে দিয়েছে। কিন্তু লুৎফার ভাই আবছারের মাদক পাচার ও ইয়াবা নিয়ে আটক হবার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন।