দেশের-খবর

‘সাব্বির, আর মনে হয় বাঁচতে পারবিনা, কারো সঙ্গে কথা বলার থাকলে কল কর এখনিই’

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এমভি অভিযান-১০

নামের একটি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে।

এতে প্রাণ হারায় ৪১ জন এবং আরো শতাধিক যাত্রী আহত হয়। নিখোঁজ রয়েছে অনেকেই। এই দুর্বিষহ অগ্নিকাণ্ড থেকে মা, ভাগ্নে ও নানিকে নিয়ে বেঁচে ফিরে এসেছে রাজধানীর ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির মাহমুদ (১৮)। সাব্বির বরগুনা পৌরশহরের পুলিশ লাইন এলাকার বাকির হোসাইনের ছেলে। অগ্নিকাণ্ডের পরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শুক্রবার দুপুরে মা, নানী এনং ভাগ্নেকে নিয়ে বাসায় ফেরে সাব্বির। গতকালের পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন সাব্বির। সাব্বির

মাহমুদ বলেন, ‘আমি এবার এইসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা শেষ হওয়ায় আম্মু, নানী এবং নেজাদ নামের এক ভাগনেকে নিয়ে বরগুনা রওয়ানা হই। গতকাল ৬ টায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ে। লঞ্চে প্রচুর যাত্রী থাকায় আমরা কেবিন পাচ্ছিলাম না, অনেক খোঁজাখুঁজির পর দ্বিতীয় তলায় পেছনের দিকে ডেকে জায়গা পাই। লঞ্চ কিছুক্ষণ চলার পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে আমরা টের পেলার আমাদের কেবিনের মেঝে অসহ্য রকম গরম হয়ে যাচ্ছিলো। পরে গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকলে ওখানে দায়িত্বরত স্টাফরা আমাদের নিচতলায় মেইন গেটের পাশে অন্য আরেকটি স্টাফ কেবিনের ব্যবস্থা করে দেন।’ সাব্বির মাহমুদ আরো বলেন, রাত গভীর হলে আমি ঘুমিয়ে পড়ি, আম্মু নেজাদ ও নানি লুডো খেলছিলো। হঠাৎ আম্মুর ডাকাডাকিতে আমার ঘুম ভাঙে। বাইরে গিয়ে দেখি ইঞ্জিনরুমের ওদিকে প্রচুর আগুন জ্বলছে। ধোঁয়ায় পুরো লঞ্চ ছেয়ে গেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে লোকজন নিচে পড়ছে। মানুষের আহাজারিতে আমরা নিরুপায় হয়ে তাকিয়ে ছিলাম শুধু। আমাদের সামনেই জ্বলন্ত মানুষ নিচে পড়ছিলো। এরকম ৪০-৫০ মিনিট চলছিলো। এরপর লঞ্চ নদীর চরের পাস বেয়ে যেতে থাকে, সবাই লাফিয়ে তীরে নামছে, অনেকে পুড়ছে। পোড়া মানুষের গন্ধে আশপাসের পরিবেশ দুর্বিষহ হয়ে গেছিলো। এমন সময় আমরা দৌড়ে গিয়ে লঞ্চের একদম সামনের খোলা যায়গায় চলে যাই। তখন আম্মু আমাকে বলে- ‘সাব্বির, আর মনে হয় বাঁচতে পারবিনা, কারো সঙ্গে কথা বলার থাকলে কল কর এখনিই’। তিনি আরো বলেন, ‘এটা শোনার পরে আমার মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় সত্যিই মরে গেছি। তবুও আম্মুকে বললাম ওদেরকে নিয়ে লাফ দাও। আমি নিজেও কোনকিছু না ভেবে সামনে লাফ দেই, আমার সাথে আম্মু, নানি ও নেজাদ ও লাফ দেয়। আমি লাফিতে তীরে উঠলেও আম্মুরা পানিতে পড়ে যায়। পরে তারা তীরে উঠে আসে। আমার কোমরে ব্যথা পেয়েছি।’ সাব্বির বলেন, এরপর স্থানীয়রা আমাদের ধরে রাস্তায় নিয়ে যায়। আমি রাস্তায় শুয়ে পড়ি। একটু পর অ্যাম্বুলেন্স এসে আমাদের ঝালকাঠি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখনে চিকিৎসা নিয়ে আজ দুপুরে বাসায় আসি। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নলছিটির সুগন্ধা নদীর পোনাবালীয়া ইউপির দেউরী এলাকায় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭০ জন। ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১৬ জনকে। পাশাপাশি আহত হয়েছেন শতাধিক।

Related Articles

Back to top button