Uncategorized

পঙ্গু স্ত্রীর ইচ্ছেপূরণে রিকশা আবিষ্কার, যেভাবে এলো ঢাকায়

ঢাকাসহ দেশের অগনিত অঞ্চলে চেখে পড়ে তিন চাকার বাহন রিকশা।

এই বাহনটি বাংলাদেশের বাইরে আর কোনো দেশেই এতো পরিমাণে নেই।

রাজধানী ঢাকায় রিকশার সংখ্যা সর্বাধিক। এ জন্যই ঢাকাকে বলা হয় রিকশার নগরী। সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধুমাত্র ঢাকায় বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ১৫ লাখ রিকশা রয়েছে। আর পুরো দেশে কী পরিমাণ রিকশা রয়েছে তা অনুমান করাও মুশকিল। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ২০১৫ সালের প্রকাশনা অনুযায়ী, ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষ নিয়মিত চলাচলের ক্ষেত্রে রিকশার ওপর নির্ভরশীল। রিকশা প্রথম আবিস্কার হয় জাপানে। আবার কোনো কোনো গবেষকদের মতে রিকশা তৈরি করেছেন মার্কিনীরা। রিকশা আবিষ্কারের সঠিক ইতিহাস নিয়ে রয়েছে মতভেদ। গবেষক মুনতাসির মামুনের ‘স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী ঢাকা’ বইতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্যাডেল চালিত যে রিকশার প্রচলন, সেটা সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে। রিকশার আদিকথা ‘রিকশা’ শব্দটি এসেছে জাপানি ‘জিন্‌রিকিশা’ শব্দ থেকে। যেখানে জিন অর্থ মানুষ,রিকি অর্থ শক্তি এবং শা অর্থ বাহন। অর্থাৎ রিকশার আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় মানুষের শক্তিতে চলা বাহন বা মানুষ চালিত বাহন। শুরুর দিকে রিকশা তিন চাকার ছিল না। সেগুলো দুই চাকায়

ভর করে চলত। যার সামনে ছিল লম্বা হাতল। এটি ধরে একজন মানুষ হেঁটে বা দৌড়ে এই রিকশা টেনে নিতেন। যা অনেকটা বর্তমানের ঠেলাগাড়ির মতো। তখন ‘রিকশা’ বলতে এ ধরনের হাতে টানা রিকশাকেই বোঝানো হত। পরে দুই চাকার রিকশার ডিজাইন তিন চাকায় বিকশিত হয়। রিকশা আর্ট। ছবি: সংগৃহীত রিকশা আর্ট। ছবি: সংগৃহীত গবেষক এম উইলিয়াম স্টিলির ‘রিকশা ইন সাউথ এশিয়া, ইন্ট্রোডাকশন টু স্পেশাল সেকশন’ গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৮৬৯ সালের দিকে জাপানে কাহার-টানা পালকির বিকল্প হিসেবে এই হাতে টানা রিকশার উদ্ভব হয়। পালকি টানা ছিল কষ্টসাধ্য, গতি ছিল কম। সে হিসেবে রিকশা অপেক্ষাকৃত দ্রুত বাহন হওয়ায় এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দেশটির মিজি সাম্রাজ্যের শাসনামলে এই রিকশা তৈরি হয়। শুরুর দিকে কেবল ভারী মালপত্র বহনের ক্ষেত্রে রিকশা ব্যবহার হতো। পরে ১৮৭০ সালের দিকে এটি মানুষের চলাফেরার জনপ্রিয় বাহন হয়ে ওঠে। ওই গবেষণা অনুযায়ী ১৮৭৫ সাল নাগাদ জাপানে রিকশার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর আকিহা দাউসুকে নামক এক ব্যবসায়ী রিকশার আকার ছোট, আকর্ষণীয় ও আরামদায়ক করে তোলেন। তখন থেকেই নরম সিট, হুড এবং ফুট রেস্ট, টায়ার যুক্ত করা হয়। সেখান থেকেই এসব রিকশা ১৮৭৩ সালে চীনে, ১৮৭৪ সালে হংকং ও ১৮৮০ সালে সিঙ্গাপুরে ছড়িয়ে পড়ে। জাপানের ইতিহাসবিদ সিডেনস্টিকার মতে, ১৮৬৯ সালে এই রিকশা প্রথম তৈরি করেছিলেন ইজুমি ইয়োসুকি নামের এক রেস্তোরাঁর মালিক। অবশ্য এই রিকশা আবিষ্কারের পেছনে ইজুমি ইয়োসুকির সঙ্গে সুজুকি টোকোজিরো ও তাকায়ামা কোসুকি নামের দুজন ব্যক্তির অবদান রয়েছে। মানুষ বহনের কাজে বাহনটি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ১৮৭০ সালের জাপান সরকার ওই তিনজনকে এই বাহনটি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি ও বিক্রির অনুমোদন দেয়। পরে রিকশা চালানোর লাইসেন্স হিসেবে এ তিনজনের যে কোনোও একজনের অনুমোদনের সিল লাগতো। ওই গবেষণায় তাদেরকেই রিকশা আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। এভাবে আস্তে আস্তে রিকশা জাপান থেকে ভারত, চীন, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একেক দেশে এই রিকশার গঠন ও আকৃতি একেক রকম। নামও আলাদা। চীনে একে বলা হয় সানলুঞ্চে, কম্বোডিয়ায় সিক্লো, মালয়েশিয়ায় বেকাক, ফ্রান্সে স্লাইকো নামে রিকশা পরিচিতি পায়। আবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এটি পেডিক্যাব নামেও পরিচিত। তবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি সংকটের কারণে বিভিন্ন দেশে রিকশার প্রচলন ব্যাপক বেড়ে যায়। পঙ্গু স্ত্রীকে শহর দেখানোর ইচ্ছে থেকে রিকশা আবিষ্কার রিকশা জাপানে উদ্ভাবিত হলেও সেটির নকশা করেছিলেন জোনাথন স্কোবি বা জোনাথন গোবলে নামের একজন মার্কিন খ্রিস্টান মিশনারী। এমন দাবি করা হয়, পারকার এফ ক্যালভিনের লেখা ‘জোনাথন গোবলে ইন জাপান’ বইয়ে।

Related Articles

Back to top button